করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে রাজধানী হো চি মিন সিটিতে লকডাউন ঘোষণার সময় ভিয়েতনাম সরকার বলেছিল, সরকার দরিদ্র পরিবারগুলোকে দেখভাল করবে। কিন্তু গত দুই মাসে পুরো বিপরীত চিত্রটিই দেখা গেছে। অনেককেই শুধু ভাত ও মাছের সস খেতে হচ্ছে, তাও আবার পর্যাপ্ত নয়। এদেরই এক জন ত্রান থি হাও জানান, গত জুলাই থেকে তাকে বিনাবেতনে ছুটিতে রাখা হয়েছে। তার নির্মাণ শ্রমিক স্বামীর কাজ নেই গত কয়েক মাস ধরে। বাড়িভাড়া বাকী পড়েছে কয়েক মাসের, এরই মধ্যে চলে আসছে আরও একটি মাস। থি হাও বলেন, ‘যতদূর সম্ভব নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি, জানি না এরপরে কী হবে। আমার অনুভূতিগুলো কীভাবে প্রকাশ করতে হবে তা আমার জানা নেই। আমি তাদের কাছে জানতে চাই, কেন কোনো সহযোগিতা নেই। সরকার বলেছিল, আমার মতো মানুষদের কাছে তারা সহায়তা পাঠাবে, কিন্তু কিছুই মেলেনি। আমার আশেপাশে যারা বাস করছে সবাই একই সুতায় ঝুলছে।’ ভিয়েতনামের সবচেয়ে বড় শহর হো চি মিনে কঠোর লকডাউন চলছে। বাসিন্দাদের খাবারের জন্যও বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলমান বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, প্রত্যেককে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। দরিদ্রদের কাছে খাবার পাঠানোর জন্য সেনাবাহিনীকেও কাজে লাগানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে শহরের বিশাল জনগোষ্ঠী এ পর্যন্ত কোনো সহায়তাই পায়নি। গত মে মাসের শুরুর দিকে ভিয়েতনামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল চার হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ৩৫। কঠোর লকডাউনের মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখায় বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল দেশটি। কিন্তু আগস্ট থেকে চিত্র বদলাতে শুরু করে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের কারণে হো চি মিন সিটি ও প্রতিবেশী প্রদেশগুলোতে গত মাসে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৪২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময় মারা গেছে ৯ হাজার ৭৫৮ জন আক্রান্ত। হো চি মিনে দৈনিক পাঁচ হাজার মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে গড়ে ২০০ জন। গত জুন থেকে ভিয়েতনামে কঠোর লকডাউন চলছে। কারখানা ও মার্কেটগুলো বন্ধ থাকায় হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, দারিদ্র সীমার নিচে পৌঁছেছেন ট্যাক্সি চালক, রাস্তায় খাদ্য বিক্রেতা ও নির্মাণ শ্রমিকরা। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু হো চি মিন সিটির ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ মহামারিতে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। নাগরিক সংগঠনগুলোর কাছে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ খাদ্য সহায়তা চাইছে। কিন্তু সবার চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না। ফুড ব্যাংক ভিয়েতনাম নামে একটি দাতব্য সংস্থার প্রধান এনগুয়েন তুয়ান খোই বলেন, ‘আমি যুদ্ধের পরে জন্মেছি। তাই মৃত্যু ও অনাহারের মতো পরিস্থিতির কথা আমরা শুনেছি ও বইতে পড়েছি। কিন্তু আমি এখন সেই কঠিন অবস্থা অনুধাবন করতে পারছি।