নিজস্ব প্রতিনিধি – ভারতের রাজনীতিতে ভাঙনের মুখে পড়েছে কংগ্রেস। প্রাক্তন সাংসদ কীর্তি আজাদ গত মঙ্গলবার কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভগবত ঝা আজাদের ছেলে। তাঁকে দলে বরণ করে নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূলে যোগ দিয়ে কীর্তি আজাদ বলেন, ‘মমতাদির মতো নেত্রীই দেশকে বাঁচাতে পারেন।’
বিহারে বিজেপির জোটসঙ্গী সংযুক্ত জনতা দলের নেতা পবন ভার্মাও যোগ দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূলে। সাবেক কূটনীতিক পবনের মতে, ভারতীয় রাজনীতিতে মমতাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেত্রী। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলের হাত শক্তিশালী করতে বিরোধীদের উদ্দেশে আহ্বান জানান তিনি।
বিজেপিকে হারানোর ক্ষমতা নেই কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্বের। রাহুল গান্ধীর প্রতি অনাস্থা থেকেই কংগ্রেস নেতারা বিজেপিকে হারাতে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন—এমনটাই মনে করেন সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সাবেক সভানেত্রী ও বর্তমানে তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব। তাঁর মতে, বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে মমতার হাতকেই শক্তিশালী করতে হবে।
গান্ধী পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তিনি বলেন, ‘সব রাজ্যেই কংগ্রেস ভাঙছে। নেতারা বিজেপিতে যাওয়ার বদলে তৃণমূলে যোগ দিলে দেশেরই মঙ্গল।’
তবে কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে মমতা বিজেপির সুবিধা করে দিচ্ছে—এমন অভিযোগ করতে শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীররঞ্জন মজুমদার। কিন্তু তাঁর এই অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল।
তৃণমূল সাংসদ ডা. শান্তনু সেনের মতে, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিত মুখার্জি, গোয়ার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরিও থেকে শুরু করে একঝাঁক কংগ্রেস নেতা বিজেপিকে হারানোর জন্যই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। কারণ দুই-দুবার সুযোগ পেয়েও রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদিকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ভারতীয় রাজনীতিতে একমাত্র তৃণমূলই বিজেপিকে পাল্টা ভাঙতে সক্ষম হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে বিজেপির বহু নেতা ও জনপ্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়, রাখতাম প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি থেকে শুরু করে বহু নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা কীর্তি আজাদ অবশ্য বিজেপিতেই ছিলেন। পরে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসে যোগ দেন। সেখান থেকে তিনি এবার যোগ দিলেন তৃণমূলে। কংগ্রেস অবশ্য দলের ভাঙন নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। অধীরের মতে, নীতি ও আদর্শের ওপরই টিকে থাকবে কংগ্রেস। এদিকে দলকে শক্তিশালী করতে জাতীয় সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনের আগে দিল্লিতে বড় ধরনের সভার আয়োজন করছে কংগ্রেস। সেই সভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদরাকে। দিল্লিতে জোর গুঞ্জন—প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ মানেকা গান্ধী ও তাঁর ছেলে বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধী কংগ্রেসে ফিরতে পারেন। উত্তর প্রদেশ নির্বাচনের আগে প্রিয়াঙ্কার তরফে এটাও একটা বড় চমক হতে পারে গান্ধী পরিবারের।
74 total views, 8 views today