বিশ্ববাংলা সেরা সম্মান ২০১৮, মাদার টেরেজা স্মারক সম্মান ২০১৮,

 বঙ্গরত্ন গৌরব সম্মান ২০১৮ দ্বারা অলংকৃত

আচার্য্য শিবু শাস্ত্রী

আচার্য্য, শাস্ত্রী, প্রাক শাস্ত্রী, রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থানম

(ভারত সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত)

জ্যোতিষ ভারতী, জ্যোতিষ শাস্ত্রী, জ্যোতিষ আচার্য, তান্ত্রিকাচার্য্য,

জ্যোতিষ এশিয়াশ্রী উপাধি প্রাপ্ত (স্বর্ণপদক প্রাপ্ত)

যোগাযোগ – ৯৮৩০২৯২১৭৪

Email : acharyashibusastri@gmail.com

জ্যোতিষ বিজ্ঞানে রত্নের ভূমিকা

রত্ন-পাথরের ইতিহাস থেকে জানা যায় ভূত্বকে, ভূগর্ভে ও সমুদ্রগর্ভে সুনীল জলরাশির তলে বিভিন্ন প্রকার রত্ন-পাথর পাওয়া যায়। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে গ্রহ-নক্ষত্রের শুভাশুভ ক্রিয়া মানুষের জীবনে বিদ্যমান থাকলেও রত্ন দ্বারা কি তার প্রতিকার সম্ভব? বা রত্ন ধারণে কি উপকৃত হওয়া যায় ? এর উত্তরে বলা যেতে পারে না, মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গ পরমাণুর সমন্বয়ে সৃষ্ট। সৌরমণ্ডলের গ্রহগুলোও পরমাণুর সমষ্টি। আর বিভিন্ন প্রকার রত্নগুলো এমন সব পদার্থের সমন্বয়ে সৃষ্ট যার উপস্থিতি মানব দেহেও বিদ্যমান। বিভিন্ন প্রকার রত্ন সরাসরি মানব দেহের ত্বককে স্পর্শ করে শরীরের উপর ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক প্রভাব বিস্তার করে মানব দেহের বিদ্যমান যে কোনো পদার্থের অসামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থিতির সামঞ্জস্য আনয়ন করে।

বিভিন্ন প্রকার বিভিন্ন গ্রহের রশ্মি অতিমাত্রায় আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করতে পারে। তাই রত্ন ধারণ করে স্নায়ুর উপর বিশেষ বিশেষ গ্রহের রশ্মি যোগ বা বিয়োগ করে শক্তিশালী করা সম্ভব। ফলে স্নায়ুগুলি শক্তিশালী হবে ও নতুন চিন্তা চেতনায় জীবন প্রবাহের ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল ভাবে এগিয়ে নেবে। আলোক রশ্মি, বায়ুমণ্ডল ভেদ করে পৃথিবীর ভূ-ভাগের উপর পতিত হয়। গ্রহদের যেমন নিজস্ব তেজ বিকিরণের ক্ষমতা আছে, প্রতিটি রত্নেরও তেমনই পৃথক পৃথক তেজ আহরণের ক্ষমতা আছে। সূর্য এবং গ্রহমণ্ডল থেকে বেরিয়ে আসা এই আলোক রশ্মিই আমাদের উপর নানাভাবে কাজ করে। ভূগর্ভে বা সমুদ্র গর্ভে যে সকল রত্ন-পাথর সৃষ্টি তা ওই সৌর রশ্মিরই রাসায়নিক ক্রিয়ার ফল। মানব দেহের উপর কস্মিক রে -এর প্রভাব বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত। সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ও অপরাপর রঙ বিভিন্ন প্রকার রত্ন পাথর এবং এর আভ্যন্তরীণ প্রচ্ছন্ন শক্তির উপর পরোক্ষ ও প্র ক্রিয়াশীল হয়ে মানবদেহে সংক্রমিত বিভিন্ন প্রকার ব্যাধির প্রতিকার করতে পারে উল্লেখ্য রত্নগুলোতেও বিভিন্ন রঙ বিদ্যমান। রত্নগুলো হচ্ছে হীরা, রুবী, পান্না গোমেদ, ক্যাটসআই, পোখরাজ, প্রবাল ইত্যাদি।

আরো জানা যায়, বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ সৌরজগৎ-কে স্পেকট্রোসে • দিয়ে বিশ্লেষণ, পরিশীলন এবং অধুনা আবিষ্কৃত ‘কিরলিয়ান ফটো পদ্ধতি’ দ্বারা যে ব্যাখ্যা পেয়েছেন, তার সঙ্গে প্রাচীন জ্যোতিষশাস্ত্রবিদগণ কর্তৃক বিশেষিত জ্যোতিষ শাস্ত্রের বিভিন্ন তত্ত্বীয় ও ফলিত মতবাদগুলোর মধ্যে সাদৃশ্য খুজে পেয়েছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান আজ প্রমাণ করছে যে, গ্রহ নক্ষত্র ও নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর প্রতিটির উজ্জ্বলতা অনুযায়ী পৃথক পৃথক রঙ বিদ্যমান যেমন আমাদের সূর্যের রঙ হচ্ছে। হালকা কমলা, শুক্রের রঙ হচ্ছে ধবধবে সাদা। আর উত্তর আকাশের অন্যতম উজ্জ্বলতর তারকা প্রক্সিমা সেন্টরাই-এর রঙ হচ্ছে উজ্জ্বল নীল। প্রাচীন জ্যোতিষবিদগণ হাতের বিভিন্ন স্থানে বিবিধ গ্রহের অবস্থান ধরে সে স্থানগুলোকে বিবিধ রঙ-এর প্রতিবিম্ব উল্লেখ করেছেন। আর বিভিন্ন প্রকার রত্ন পাথরের রঙ যে ভিন্ন ভিন্ন তার সঙ্গে গ্রহ ও নক্ষত্রের রঙ-এর সাদৃশ্যও তারা এভাবে পেয়েছেন। সুতরাং জ্যোতিষ বিজ্ঞানে রত্নের ব্যবহার অভ্রান্ত নয় বলেই মনে হয়।

রত্ন পাথর কেনার আগে জানা

প্রতিটি গ্রহ নক্ষত্রই অণুপরমাণু দ্বারা সৃষ্টি। মানব দেহও অণু পরমাণু দ্বারা সৃষ্টি, আবার প্রতিটি রত্ন পাথরও অণু পরমাণু দ্বারা সৃষ্টি। আমরা চোখে দেখতে পাই, কারণ আমাদের চক্ষুদ্বয়ের উপর সূর্য রশ্মির আলোকের ক্রিয়ার ফল। যাদের চোখের ক্ষমতা কমে যায় তাদের দৃষ্টি শক্তি ঝাপসা হয়ে আসে। বিশাল সূর্যের প্রখর রশ্মিও তাদের সঠিকভাবে কোনো কিছু দেখাতে সক্ষম হয় না। সেখানে সামান্য দু’টি মাত্র লেন্স ব্যবহার করেই তারা সবকিছু সুন্দরভাবে দেখতে পারেন।

সূর্যের যেমন তেজ বিকিরণের ক্ষমতা আছে তেমনি আমাদের চোখের লেন্সেরও তেজ আহরণের ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতা কমে গেলে অতিরিক্ত লেন্সের তেজ আহরণী ক্ষমতা আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে সুস্থ্য করে তোলে। সূর্যের আলো প্রতিটি গ্রহের উপর পতিত হয় এবং গ্রহের মাধ্যমে গ্রহের বর্ণানুসারে পৃথক পৃথক আলোক রশ্মি ইথার তরঙ্গের মাধ্যমে পৃথিবীর উপর এসে পড়ে, সূর্য এবং প্রতিটি গ্রহ থেকে বেরিয়ে আসা সেই সব আলোক রশ্মিই আমাদের উপর নানাভাবে ক্রিয়। করে। গ্রহদের যেমন নিজস্ব তেজ বিকিরণের ক্ষমতা আছে তেমনি প্রতিটি রত্ন পাথরেরও পৃথক পৃথক তেজ আহরণের ক্ষমতা বিদ্যমান। ফলশ্রুতিতে রত্ন পাথর যদি সঠিকভাবে নির্ণয় করা না যায়, রত্ন পাথর ধারণে ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা যায়। ভগবান পৃথিবীতে যা কিছুই সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে নর ও নারীর সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন অনেক গাছে ফল হয় না, কারণ উক্ত গাছটি নর শ্রেণীর। ভগবানের সৃষ্টির প্রতিটি বস্তুর যেমন নর ও নারী আছে, সেখানে রত্ন পাথরেরও নর ও নারী আছে। আপনি একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন বাড়ি নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত পাথর ছোট বড় আকারের দেখাতে পাবেন। কোনো পাথর খুব কঠিন, আবার কোনো পাথর খুব নরম। তদ্রুপ মানবদেহে ব্যবহৃত রত্ন পাথরের ক্ষেত্রেও। পুরুষদের জন্য নারী শ্রেণীর ও নারীদের জন্য নর শ্রেণীর রত্ন পাথর যদি বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে শোধন করা যায় তবে দ্রুত ফলপ্রদ হয়। বর্তমান সময়ে সঠিক অর্থাৎ ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ রত্ন পাথর পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও বেশ কিছু পাওয়া যায়, তবে মূল্য এতো অধিক যে অনেকে কিনতে সাহস পান না। রত্ন পাথরের বয়স, রাসায়নিক উপাদান, কাঠিন্যতা, রত্নের আপেক্ষিক গুরুত্ব, রত্নের আলোক বিচ্ছুরণ ক্ষমতা, সর্বোপরি রত্নের শুদ্ধতার উপর নির্ভর করে রত্নের মূল্য। আবার দেখতে হবে যে রত্নটি সুলগ্নে সৃষ্টি হয়েছে কি না। কেননা কুলগ্নে বা কুসময়ে সৃষ্টি রত্ন পাথর মানব শরীরে অশুভ গ্রহের প্রভাব নিরসন করতে অক্ষম। এর জন্য দিব্যদৃষ্টি সম্পন্ন পাকা জহুরীর প্রয়োজন যিনি রত্নের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করতে সক্ষম। পৃথিবীর সব বস্তুর যেমন উত্তম, অতি উত্তম ও সর্বোত্তম বলে কথা আছে ঠিক তেমনই রত্ন পাথরের ক্ষেত্রেও উত্তম, অতি উত্তম ও সর্বোত্তম বলেও কথা আছে। রত্ন পাথর বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠানে গেলে বুঝতে পারবেন যে একই ধরনের রত্ন পাথরের বিভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করা আছে, এই মূল্যের তারতম্য ঘটে রত্নের বয়স শুদ্ধতা ও রাসায়নিক গঠন শৈলীর উপর ভিত্তি করে। আজকাল সিনথেটিক রত্ন পাথরে বাজার ছয়লাপ হয়ে গেছে।যা দেখে মনে হয় অতি উত্তম রত্ন, তাই বিশ্বস্ত ব্যক্তি বা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকেই ক্রয় করবে, এবং পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে নেবেন। এই জগতে মানু উন্নত জীব তাই সবকিছুই নকল করতে পারে। নিজের স্বাের্থ বা ঝোলা ভরার জন্য যদিও তারা বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না। কারণ ঈশ্বর তাদের ক্ষমা করেন না।

Loading