নিজস্ব প্রতিনিধি – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বব্যাপী গত ৫০ বছরে জনস্বাস্থ্যের যে অগ্রগতি হয়েছিলো তাকে পূর্বাবস্থায় ফেরানের হুমকি দিচ্ছে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে মানব স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে। তাপদাহ, ঝড়, খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় আঘাত, রোগ বৃদ্ধি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা বাড়ছে। এগুলো বিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠিকে অসমভাবে প্রভাবিত করছে যা গত পাঁচ দশকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রগতিকে বিপরীতে নেয়ার হুমকি সৃষ্টি করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপর্যয় এড়াতে বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি কোনো ভাবেই বাড়তে দিতে দেয়া যাবে না। প্যারিস চুক্তিতে দেয়া ডিগ্রী এবং এমনকি এক ডিগ্রী গরমের অতিরিক্ত দশমাংশও মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেরবে। সবুজ বিনিয়োগ নীতি কার্যকর করে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রতিশ্রুতিতে সংকল্পবদ্ধ থাকতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয় কারণ দেশগুলো করোনা মহামারী থেকে বেরিয়ে এসেছে, জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি বন্ধ করেছে এবং জনস্বাস্থ্যকে সর্বজনীন নীতি হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
হু বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করার অনেক প্রচেষ্টার ইতিবাচক স্বাস্থ্য সুবিধাও রয়েছে। ড্রাইভিংয়ের পরিবর্তে সাইকেল চালানো ও হাঁটা নিঃসরণ কমায় এবং আরো শারীরিক ক্রিয়াকলাপের দিকে পরিচালিত করে। শহরে সবুজায়ন প্রকল্প বায়ু দূষণ রোধ করতে সহায়তা করে এবং বাসিন্দানের ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ মুক্তির স্থান হিসেবে কাজ করে। হু উদ্ভিজ খাদ্য গ্রহণ করে পুষ্টি গ্রহণের পাশাপাশি বৈশ্বিক নির্গমন হ্রাসে সহায়তার সুপারিশ করেছে। এর ফলে আরো স্থিতিস্থাপক খাদ্য ব্যবস্থা তৈরি হবে যা বছরে ৫০ লাখ ডায়েট সম্পর্কিত মৃত্যু রোধ করবে। হু’র মতে, বায়ু দূষণের মত পরিবেশগত ঝুঁকি প্রতিবছর ১ কোটি ৩৭ লাখ মৃত্যুর জন্য দায়ী। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নিরাপদ, পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পরিবেশ’কে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে ফিজি এবং মালদ্বীপের মতো জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো আনা এই রেজ্যুলেশনের বিরোধীতা করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য।
আগামী ২৬ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের গ্লাসকোতে শুরু হওয়া জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ২৬ এর পূর্বে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এটি গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণে অগ্রগতি এবং নতুন লক্ষ্য অর্জনের কথা বলা হয়েছে। তবে সমালোচকরা এই সম্মেলন সফল না হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলছেন, বিশ্বনেতাদের কথা এবং কাজের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে।