কালীপূজা অমাবস্যার রাতে হয় কেন?

প্রফেসর ডক্টর কুশল সেন

অধ্যাপক (ফলিত সংখ্যাতত্ত্ব), Astrological Research Institute of Krishnamurti Paddhati (ARIKP)

সদস্য, মার্গদর্শক মন্ডল, ভারতীয় বৈদিক জ্যোতিষ সংস্থানম্‌, বারানসী

e-mail :  kooshoeg@gmail.com

পুষ্যা নক্ষত্র যুক্তা নামী শনিবার, মঙ্গলবার, অমাবস্যা ও অষ্টমী প্রভৃতি পর্ব তিথি কালীপূজার পক্ষে প্রশস্ত সময়। শুক্রবারে দ্বিতীয়া বা দশমী, শনিবারে পূর্ণিমা  ও মঙ্গলবারে অমাবস্যা হলেও কালীপূজার পক্ষে প্রশস্ত। তাছাড়া নানা কামনাযুক্ত পূজার জন্য বিশেষ বিধান হল, বৈশাখ, কার্তিক  , মাঘ ও ফাল্গুন মাসের অমাবস্যায় কালীপূজা হয়ে থাকে।

উত্তর কামাক্ষ্যাতন্ত্রে উল্লেখ আছে –

শরৎকালে দীপযাত্রা দিনে অমাবস্যা প্রাপ্ত হলে মধ্যরাত্রে মৃন্ময়ী প্রতিমাকে উত্তমরূপে অলংকার দ্বারা ভূষিত করে, দীপমালা এবং নানাপ্রকার বলি ও উপকরণ দান করবে, বিশেষতঃ নানাবিধ বাদ্য, নৃত্য, গীত ও কৌতুক ক্রিয়া দ্বারা রাত্রি অতিবাহিত করে, পরে প্রাতঃকালে শত্রুনাশিনী কালীকে বিসর্জন দেবে।

এতে বোঝা যায় যে অমাবস্যা শব্দে দীপযাত্রার অর্ধরাত্র। আবির্ভূত এই শব্দের দ্বারা ওই অর্থরাত্রে কালীর জন্ম বলে জানা যায়। তাই ওই দিনের পূজাই মুখ্য পূজা ও অন্য দিনের পূজা গৌণ পূজা।

কার্তিক  মাসের কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চদশ তিথিতে (অর্থাৎ অমাবস্যায়) মহানিশি সময়ে কোটী যোগিনীর সঙ্গে কালী আবির্ভূতা হন। ওই অমাবস্যার মহানিশিতে বলি ও পূজাদি যা করা হয়, তা অক্ষয় হবে। অধিকন্তু কালী তার প্রতি প্রসন্ন হন।

  যামল তন্ত্র অনুসারে

‘কার্তিকে মাসে কৃষ্ণায়াং পঞ্চদশ্যাং মহানিশি

পূজয়েত যোহতিত্মেন কালবিদ্যা প্রসীদিত

মৃন্ময়ীং প্রতিমাং কৃত্বা মহাকালীং প্রপূজয়েৎ

তারানাং বামানাং তারাদ্যা তারিনীং পরা।

উন্মাত্তা ভৈরববস্তুত সর্বলক্ষণ সংযুক্তা।।

অর্থাৎ কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যার মহানিশিতে মৃন্ময়ী প্রতিমা গড়ে যে ব্যক্তি মহাকালীর পূজা করে, তার প্রতি কালী প্রসন্না হয়ে থাকেন।

সাধকের সাধনক্রিয়ার ফলে মনের একের পর এক চক্র ভেদ করে ঊর্ধ্বগতি হয়। যেমন ঈড়া বা পিঙ্গলা নাড়িতে প্রাণের কোনোরূপ বহির্মুখী গতি থাকে না। তখন শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি শুধু সুষুম্নার মধ্যেই থাকে। সেই রকম অমাবস্যার রাত্রে চন্দ্রের প্রকাশ না থাকার দরুন যেমন অবস্থা হয় সাধকেরও সুষুম্নার শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি হওয়ায় মনের সেই অবস্থা হয়। মন বা প্রাণের আলাদা কোনো অস্তিত্ব থাকে না। সেই সময় মন ও প্রাণ এক হয়ে শূণ্যবৎ হয়ে থাকে।

ভারতীয় আধ্যাত্মিক সাধনার ইতিহাসে, মাকালী কি তা মুখে বলা যায় না। এই আধ্যাত্ম সাধানায় শক্তিতত্ত্ব অতি প্রাচীন এবং বৈদিক কাল থেকেই উপনিষাদিতে বীজাকারে এই তত্ত্ব পরিলক্ষিত হয়। বেদান্তের দুটি ধারা – (১) সৃষ্টি তত্ত্ব ও ঈশ্বরতত্ত্ব যাকে অবলম্বন করে আছে মায়াবাদ (২) জ্ঞানবাদ – যাতে মায়াবাদ জগৎ ব্যাখ্যার মূল তত্ত্বস্বরূপ। মায়া এখানে ভাবরূপ, জ্ঞানবিরোধী। তন্ত্র সাধনায় এই মায়ায় ব্রহ্ম জ্ঞানপ্রাপ্তির সহায়ক হয়ে ওঠে। অবতারতত্ত্বে শক্তি স্বীকৃত, তাই তন্ত্রসার গ্রন্থে; মাকালীকে উদ্ধৃত করে উল্লিখিত রয়েছে –

 ‘সাম্যাবস্থা গুনোপাধিকা ব্রহ্মরূপিণী দেবী।’

Loading