শান্তি রায়চৌধুরী – দেবী দুর্গা দুর্গতিনাশিনীরূপেই পূজিত। শাস্ত্রীয় নিয়মে দুর্গাপূজা শরৎ ও বসন্তকালে আয়োজনের বিধান থাকলেও শারদীয় পূজাই প্রাকৃতিক কারণে বাঙালি হিন্দুসমাজ প্রধান উৎসবরূপে গ্রহণ করেছে। এই পূজার আগমনী বার্তা ঘোষিত হয় আগেই। প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় বাঙালি হিন্দুর সবচেয়ে বড় উৎসবের। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম।
করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত সারা বিশ্ব। বিপর্যস্ত ভারত। বিশ্বে প্রতিদিনই মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও। ভারতেও মৃত ও আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এই সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলা মুশকিল। জীবন-জীবিকার ওপর বিস্তৃত হয়েছে করোনার থাবা। মানবজাতির এই ভয়ংকর ‘দুর্গতি’র মধ্যেই দুর্গতিনাশিনী মা এসেছেন। এবার মা আসছেন ঘোড়ায়,
শাস্ত্রীয় নিয়মে মড়ক অবশ্যম্ভাবী। আর তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। করোনাসৃষ্ট ভয়াবহ মহামারির মধ্যেই মা আসছেন। আরমা যাচ্ছেন দোলায়। যেখানে থাকছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের গন্ধ। সুতরাং মহামারী বিপর্যয়ের মধ্যেই আমাদের মাতৃ আরধনা। স্বাভাবিকভাবেই পুজোয় মহামারীর প্রভাব পড়েছে। করোনার প্রভাব এ উৎসবের আনন্দ আয়োজন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। পূজা হবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, স্বাভাবিকভাবেই ভক্ত সমাগম কম হতে পারে। পূজার দুটো দিক-একটি সামাজিক, অন্যটি ধর্মীয়। মায়ের পূজায় ভক্তরা অংশ নেবে, অঞ্জলি দেবে, হৃদয়ের আকুতি ব্যক্ত করবে মায়ের কাছে। মায়ের আরতি হবে। পরিবারের সবাই শরিক হবে পূজায়। মায়ের পূজায় হৃদয়ের দিকটি বড়। পাঁচ দিনব্যাপী পূজার আনুষ্ঠানিকতা, প্রতিটি অনুষ্ঠান গভীর অর্থবহ। ধর্ম ও সমাজের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই সবার অংশগ্রহণে পূজা হয় সর্বজনীন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই সামাজিক মেলবন্ধনের, সহজ কথায় পূজার সামাজিক দিকটি
মহালায়ায় দেবীপক্ষের সূচনা হয়। এবার বিরাজিত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই সন্তানেরা মায়ের পূজা অর্চনা করবেন, অঞ্জলি দেবের। পার্থনা জানাবেন শান্তি সমৃদ্ধির, মহামারী থেকে মানবজাতির মুক্তির, অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের। ভারত সহ সারা বিশ্বের জন্যই এই প্রার্থনা। বিপর্যয়ের পর নতুন জীবনের প্রার্থনা।