নিজস্ব প্রতিনিধি – মাদ্রাজ হাই কোর্ট করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ভর্ৎসনা করেছে। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে রাজনৈতিক মন্তব্য পাল্টা মন্তব্যের ঝড় বয়ে চলেছে। মাদ্রাজ হাই কোর্টের বক্তব্যে সাধুবাদ জানিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের বলেছেন, “নির্নাচন কমিশনের অসাবধানতার জন্যই করোনা ছড়িয়েছে। মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঠিক কথাই বলেছেন।” অন্যদিকে, “মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতির পর্যবেক্ষণ প্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তাঁর কথায় শুধু নির্বাচন কমিশন রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য একাই দায়ী, এ বিষয়ে আমি একমত নই।” রাজ্য তথা গোটা দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর সোমবার মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন কমিশনকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ২ মে ভোট গণনা বন্ধ করে দেওয়া হবে।” দেশে লাগামহীন সংক্রমণের জন্য নির্বাচন কমিশনের এমন গা ছাড়া মনোভাবকেই দায়ী করেছে মাদ্রাজ হাইকোর্ট। এমনকী রাজ্যে বাড়তে থাকা করোনা পরিস্থিতির জন্য দায়ী নির্নাচন কমিশনকে খুনির সঙ্গেও তুলনা করেছেন বিচারপতি। বেলাগাম সংক্রমণ, ঊর্ধ্বমূখী মৃত্যু সংখ্যার মধ্যে রাজ্যে ভোটগ্রহণ চলছে। রাজনৈতিক দলগুলি প্রচারে রাশ টানার কথা ঘোষণা করলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি, সবমিলিয়ে সংক্রণ ক্রমশ বেড়েছে। সোমবার রাজ্য সপ্তম দফায় ভোটগ্রহণ। এরমাঝেই কমিশনকে তুলোধনা করে মাদ্রাজ হাই কোর্টের এই মন্তব্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতাদের কাজ মানুষকে বাঁচানোর পরিবর্তে মানুষকে আতঙ্কিত করা। হাসপাতালে বেড কমিয়ে দেওয়ার জন্যই রাজ্যে এই অবস্থা, কোয়ারেন্টিন সেন্টার কমিয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। মানুষের জন্য আইন আদালতের জন্ম হয়েছে। আইনের জন্য মানুষ নয় । এই রায় খুবই হতাশাব্যাঞ্জক ও দুর্ভাগ্যজনক । এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনের যা জবাব দেওয়ার দেবে।” শমীক ভট্টাচার্য আরও বলেন, “২০১১ সালে মুকুল রায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন ৮ দফা নির্বাচনের দাবি করেছিলেন।” কমিশনের দায় এড়িয়ে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য , “করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর একটাও সদর্থক পদক্ষেপ করেনি রাজ্য সরকার। হাসপাতালে বেড বাড়ানোর বদলে কমিয়ে আনা হয়েছে। সরকারের জন্যই মানুষ আতঙ্কিত। কী চাইছে? নির্বাচন পিছিয়ে যাক, তৃণমূল কংগ্রেস আরও দু-বছর ক্ষমতায় থাকুক? ওরা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে যা ইচ্ছে তাই করবে, মানুষ রাস্তায় নামছে, কারণ মানুষ বুঝেছে তৃণমূলকে সরকার করোনার থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর।” মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতিকে বারবার সাধুবাদ জানিয়ে সৌগত রায়ের মন্তব্য, “বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি বাংলারই লোক, খবর পাচ্ছেন। চেন্নাইতে ১ দিনে ভোট হয়ে গিয়েছে। উনি যেটা বলছেন সেটাই সঠিক কথা। নির্বাচন কমিশনের অসাবধানতার জন্য করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ছড়িয়ে গিয়েছে, আমরা বারবার বলেছিলাম শেষ তিন দফার ভোট একসঙ্গে করতে। ওরা আমাদের কোনও কথাই শুনল না। আশা করি উনি এরপরের যে পদক্ষেপ নেওয়ার সেগুলো নেবেন। ভোটের থেকে জরুরী মানুষের জীবন। উনি ঠিকই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২ মে গণণার দিনে আবার বিপদ বাড়তে পারে।”

পাশাপাশি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর এই প্রসঙ্গে বক্তব্য , “মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারপতির পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তবে নির্বাচন কমিশন রাজ্য-কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেই ভোটের দিন ঠিক করেন। এ ক্ষেত্রে কমিশন একাই দায়ী এই জায়গাটায় আমি একমত নই। এতকিছুর পরও কমিশন, কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার উদাসীন থেকেছে।”

সূএ:কলকাতা২৪×৭

Loading